পরিবারের জন্য সাহায্য | বিয়ে
যেভাবে প্রতিশ্রুতিকে দৃঢ় করা যায়
প্রতিদ্বন্দ্বিতা
আপনি আপনার বিয়ের দিনে এক অঙ্গীকার করেছিলেন। সেই গুরুগম্ভীর প্রতিজ্ঞা ছিল চিরজীবনের এক প্রতিশ্রুতি—আপনার বিবাহসাথির প্রতি অনুগত থাকার এবং যে-সমস্যাগুলো দেখা দেবে, সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার এক দৃঢ় সংকল্প।
কিন্তু, সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন মতপার্থক্যের কারণে আপনাদের সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। আপনি কি এখনও আপনার সাথির প্রতি দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আছেন বলে মনে করেন?
আপনার যা জানা উচিত
প্রতিশ্রুতি কোনো সমস্যা নয় বরং সমাধান। বর্তমানে অনেকেরই প্রতিশ্রুতির প্রতি নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। কেউ কেউ প্রতিশ্রুতিকে পায়ের ভারী বেড়ির সঙ্গে তুলনা করে, যা নড়ানো যায় না বলে এক ভুল সিদ্ধান্তের ফাঁদে আটকে পড়ে থাকতে হয়। এভাবে চিন্তা করার পরিবর্তে, প্রতিশ্রুতিকে এক নোঙর হিসেবে দেখুন, যা আপনার বিয়েকে টিকিয়ে রাখতে পারে। মেগান নামে একজন স্ত্রী বলেন, “প্রতিশ্রুতির একটা সর্বোত্তম দিক হল, শত তর্কবিতর্ক হলেও আপনি নিশ্চিত যে, আপনি বা আপনার সাথি কেউ কাউকে ছেড়ে চলে যাবেন না।” * এমনকী যদিও মাঝে মাঝে বিয়েতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়, কিন্তু বিয়েকে এক নিরাপদ বন্ধন হিসেবে দেখলে আপনি যেকোনো সমস্যা সমাধান করার ভিত্তি খুঁজে পাবেন।—“ প্রতিশ্রুতি এবং আনুগত্য” নামক বাক্সটা দেখুন।
উপসংহার: আপনার বিয়েতে যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে, তা হলে এখনই সেই প্রতিশ্রুতিকে দৃঢ় করার সময়, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় নয়। কীভাবে তা করতে পারেন?
আপনি যা করতে পারেন
আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পরীক্ষা করুন। “বিয়ে হল চিরজীবনের বন্ধন।” এই বিষয়টাকে কি আপনি একটা শৃঙ্খল হিসেবে, নাকি সুরক্ষা হিসেবে দেখেন? যখন কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখন আপনার মাথায় সবচেয়ে প্রথমে কি আলাদা হয়ে যাওয়ার বিষয়টা আসে? আপনার প্রতিশ্রুতিকে দৃঢ় করার জন্য আপনাকে অবশ্যই বিয়েকে চিরস্থায়ী এক বন্ধন হিসেবে দেখতে হবে।—বাইবেলের নীতি: মথি ১৯:৬.
আপনার অতীত পরীক্ষা করুন। প্রতিশ্রুতির প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো আপনার বাবা-মায়ের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনি যা লক্ষ করেছেন, সেটার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। লিয়া নামে একজন স্ত্রী বলেন, “আমি যখন ছোটো ছিলাম, তখন আমার বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয় আর তাদের অভিজ্ঞতার কারণেই আমার মধ্যে হয়তো প্রতিশ্রুতির প্রতি নেতিবাচক ধারণা গড়ে উঠেছে।” তবে আপনি এই আস্থা রাখতে পারেন যে, আপনার নিজের বিয়েকে আপনি অবশ্যই সফল করে তুলতে পারেন। আপনার বাবা-মা যে-ভুল করেছেন আপনিও যে সেই একই ভুল করবেন, এমন নয়!—বাইবেলের নীতি: গালাতীয় ৬:৪, ৫.
আপনার কথাবার্তার ধরন পরীক্ষা করুন। আপনার সাথির সঙ্গে তর্কবিতর্কের সময় রাগের বশে এমন কিছু বলে ফেলবেন না, যেটার জন্য আপনাকে পরে অনুশোচনা করতে হবে। এই ধরনের কথা বলা এড়িয়ে চলুন, যেমন “তোমার-আমার সম্পর্ক এখানেই শেষ!” অথবা “আমি তোমার চেয়ে ভালো কাউকে খুঁজে নেব!” এই ধরনের মন্তব্য প্রতিশ্রুতির প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে এবং সমস্যার সমাধান করার পরিবর্তে, এগুলো হয়তো কেবল অপমানজনক কথাবার্তার দিকেই পরিচালিত করতে পারে। আঘাত দেওয়ার মতো কথা বলার পরিবর্তে, আপনি হয়তো এইরকম কিছু বলতে পারেন: “যেহেতু এই ঘটনার কারণে আমরা দু-জনেই দুঃখিত হয়েছি, তাই এই সমস্যা সমাধান করার জন্য আমরা একসঙ্গে কী করতে পারি?”—বাইবেলের নীতি: হিতোপদেশ ১২:১৮.
স্পষ্টভাবে দেখান যে, আপনি আপনাদের প্রতিশ্রুতির প্রতি অনুগত। কর্মস্থলে টেবিলের উপর আপনার সাথির একটা ছবি রাখুন। অন্যদের কাছে আপনার বিয়ে সম্বন্ধে ইতিবাচক কথা বলুন। আপনি যখন কিছুদিনের জন্য দূরে কোথাও যান, তখন প্রতিদিন আপনার সাথির সঙ্গে কথা বলার লক্ষ্যস্থাপন করুন। অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় “আমরা” শব্দটা ব্যবহার করুন আর “আমি ও আমার স্ত্রী” কিংবা “আমি ও আমার স্বামী” বাক্যাংশ ব্যবহার করুন। এভাবে আপনি অন্যদের কাছে তুলে ধরেন—ও সেইসঙ্গে নিজেকেও মনে করিয়ে দেন যে—আপনি আপনার সাথির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উদাহরণযোগ্য দম্পতিদের সাহায্য নিন। বিভিন্ন বৈবাহিক সমস্যা সফলভাবে মোকাবিলা করেছেন, এমন পরিপক্ব দম্পতিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। তাদের জিজ্ঞেস করুন, “প্রতিশ্রুতিকে আপনারা কোন দৃষ্টিতে দেখেন আর এটা কীভাবে আপনাদের বিয়ে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে?” বাইবেল বলে: “লৌহ লৌহকে সতেজ করে, তদ্রূপ মনুষ্য আপন মিত্রের মুখ সতেজ করে।” (হিতোপদেশ ২৭:১৭) এই নীতি মনে রেখে, সেইসমস্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে উপকারজনক পরামর্শ নিন না কেন, যারা তাদের বিয়েকে সফল করে তুলেছে? ▪ (g15-E 06)
^ অনু. 7 একজন সাথি যদি যৌন অনৈতিকতায় জড়িয়ে পড়েন, তা হলে বাইবেলের নীতি অনুযায়ী অন্য সাথি বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন। “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর” বইয়ের ২৫১-২৫৩ পৃষ্ঠায় দেওয়া “বিবাহবিচ্ছেদ ও পৃথক থাকার বিষয়ে বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি” দেখুন।